পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব
পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরনার জয় ধ্বনী নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আওয়াল মাসে। পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম উৎসব। যুগে যুগে বাতিলদের শনাক্ত করার কিছু নিদর্শন ছিল। তেমনিভাবে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সমাজে ও বাতিলদের চিনার নিদর্শন হল পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা করা। বাতিলদের বেড়াজাল থেকে মুসলিম মিল্লাতকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব
পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি?
ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন। নবীজীর পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কুরআনুল কারীমের দৃষ্টিতে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন
অর্থাৎ- আল্লাহ বলেন, হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের ঘটনা”- (রোজে আজলের সময়ের) যখন আমি (আল্লাহ) আম্বিয়ায়ে কেরামগণের নিকট থেকে এইভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন ‘আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমত’ অর্থাৎ নবুয়ত দান করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে এক মহান রাসূলের শুভাগমন হবে- যিনি তোমাদের প্রত্যেকের নবুয়তের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা সকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনযন করবে এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমরা কি এ কথার অঙ্গীকার করছো এবং অঙ্গীকারে কি অটল থাকবে? সমস্ত নবীগণ বললেন- হাঁ, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ তায়ালা বললেন- তোমরা পরস্পর স্বাক্ষী থেকো এবং আমি ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম। এর পরেও যে কেউ পিছপা হয়ে যাবে- তারা হবে ফাসেক। সূত্রঃ তৃতীয় পারা, সূরা আল-ইমরান ৮১-৮২ নং আয়াত। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো (১) আয়াতের ইবারাতুন নস-এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অন্যান্য নবীগণ থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন। (২) দালালাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত নবীগণ সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। (৩) ইশারাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলত ঐ মাহফিলটি নবীজীর আগমনী বা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মাহফিল ছিল। (৪) ইক্বতেজাউন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঐ সময় সমস্ত নবীগণ কি্বয়াম অবস্থায় ছিলেন। কারণ ঐ দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই এবং পরিবেশটিও ছিল আদবের। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব
হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন
আরো লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে- এই আয়াতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ নবীজীর আগমন সম্পর্কে রোজ আজলের মধ্যে সমস্ত নবীগণকে উপস্থিত রেখে আলোচনা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন প্রিয় আল্লাহর রাসূল, তাঁর সাথে মানুষের তুলনা হবেতো দূরের কথা, অন্য কোনো নবীর ও তুলনা হয়না। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীদের নিকট দুটি হুশিয়ারী বাণী প্রদান করেছেন। যথা- (১) আমার বন্ধুর উপর ঈমান আনতে হবে। (২) আমার বন্ধুকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। মানুষ যখন কোনো নেয়ামত ও রহমত প্রাপ্ত হয় তখন তার জন্য আনন্দ উৎসব করা তার স্বভাবগত কাজ, আর আল্লাহর নির্দেশও তাই। যেমন- পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন অর্থাৎ- হে মানবকুল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং অন্তর সমূহের বিশুদ্ধতা, হেদায়াত এবং রহমত ঈমানদারদের জন্য। হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্ত ধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুছ, আয়াত নং- ৫৭-৫৮)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থ আদ দুররুল মুনছুর এ উল্লেখ করেন- অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন বুঝানো হয়েছে আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম নূরে মোজাচ্ছম আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন, (ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতালি্লল আলামীন) অর্থাৎ হে আমার হাবীব, আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।
তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ)
সূত্রঃ সূরা আম্বিয়া আয়াত নং- ১০৭, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কৃত তাফসীরই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সামান্য জাগতিক নিয়ামত লাভ করলে তজ্জন্য ঈদ উৎসব করার সরাসরি উদাহরণ আমরা পবিত্র কুরআন মাজীদে দেখতে পাই। যেমন-অর্থাৎ- মরিয়ম তনয ঈসা (আঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আমাদের উপর আকাশ থেকে খাবারের ঝুড়ি নাযিল করুন যা আমাদের এবং আমাদের পূর্ববর্তী সকলের জন্য ঈদ এবং আপনার নিদর্শন হবে, সুতরাং আমাদের রিযিক দান করুন। আর তুমিই সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং- ১১৪)। এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খাঞ্চাভরা খাদ্য আসলে তা যদি পূর্ব ও পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ, উৎসবের কারণ ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি , রহমতের ভান্ডার, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মত মহান নিয়ামতের শুভাগমনের দিন কতইনা মর্যাদাবান, গুরুত্বপূর্ণও আনন্দের দিন বা মাস তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব
খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ছিল ?
আল্লামা শাহাবুদ্দীন ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেও ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করার নীতি প্রচলন ছিল। যেমন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার জন্য এক দিরহাম অর্থ খরচ করবে, সে ব্যক্তি বেহেশ্তে আমার সাথী হবে”। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’র ইবাদত করে এবং সম্মান করে, আল্লাহ তাকে শান্তি দান করেন, তিনি ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখেন।” হজরত উসমান (রা.) বলেন – “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ পাঠে এক দিরহাম ব্যয় করে, আল্লাহ তাকে শান্তি দান করেন। যেন তিনি বদর ও হোনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।” হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন- “যে ব্যক্তি ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করবে এবং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করার উদ্যোক্তা হবে, সে দুনিয়া থেকে (তওবার মাধ্যমে) ঈমানের সাথে বিদায় হবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। সূত্রঃ আন নে’মাতুল কোবরা আলাল ফি মাওলিদি সাইয়্যেদ ওলদে আদম ৭-৮ পৃষ্ঠা।
পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করার উপকারিতা
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝার জন্য উপরোক্ত হাদীসই যথেষ্ট। এর জন্য সামান্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- জান্নাতে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর সঙ্গী হওয়া, ইসলামকে বাঁচিয়ে রাখা, বদর ও হোনাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমতুল্য যোগ্যতা অর্জন করা এবং ঈমানের সঙ্গে দুনিয়া থেকে বিদায়ের গ্যারান্টি হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করা। এই. মিলাদুন্নবীর মাহফিল খোলফায়ে রাশেদীনের মতামত ও আমল আমাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপকারিতা সম্পর্কে জুরকানী শরীফে রয়েছে, যা আবু লাহাব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ছুয়ায়লি (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্বাস (রাঃ) এরশাদ করেন যে, এক বছর পর আবু লাহাব মারা গেলে আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম যে, সে খুবই খারাপ অবস্থায় আছে এবং সে বলছে, তোমার কাছ থেকে আসার পর আমার কোনো শান্তি হয়নি। হ্যাঁ, এতটাই যে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি হালকা হয়। তা শুনে হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটি এ জন্যই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন। আর ছোয়াইবা নামী জনৈকা ক্রীতদাসী তাকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছিল বিধায় সন্তুষ্টি চিত্তে আবু লাহাব তাকে আজাদ করে দিয়েছিল। সূত্রঃ (ফাতহুল বারি ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী শরীফ ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা) হাদীসখানা আল্লামা বদরুদ্দিন আঈনি ও তার ওমদাতুল কারী শরহে ছহীহ বুখারীতে ২য় খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা আবুল খায়ের শামসুদ্দীন ইবনে জাজরী (রহঃ) বলেছেন
উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা আবুল খায়ের শামসুদ্দীন ইবনে জাজরী (রহঃ) বলেছেন- রাসূলে মক্ববুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বেলাদাতের রাত্রে তাঁর আগমনের সু_সংবাদ শুনে খুশী হওয়ার কারনে যদি এমন জগন্য কাফের যার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে পবিত্র কুরআনে সূরা-লাহাব নাযিল করা হয়েছে, এমন কাফেরের শাস্তিক যদি হালকা করা হয়, তাহলে একজন তাওহীদবাদী মুসলমান যদি তাঁর আগমণের তারিখে খুশী হয়ে যতটা সম্ভব সম্পদ খরচ করে, তাহলে প্রতিদানের অবস্থা কি হতে পারে? উনি বলেন- আমার জীবনের শপথ, নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই হবে যে, আল্লাহ পাক তাঁকে বিশেষ অনুগ্রহে জান্নতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন। আল্লামা শামসুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে নাছির উপরোক্ত হাদিসের আলোকে নিজের ভাষ্য দিতে গিয়ে ছন্দ গাঁথা ভাষায় বলেছেন- অর্থ- এমন জঘন্য কাফের যার দোষ বর্ণনায় এসেছে যে, তার হাত ধ্বংস হয়েছে, তার স্থায়ী নিবাস চির জাহান্নাম। আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আবির্ভাবে খুশী হয়ে সর্বদা সোমবার আসলে তার থেকে আজাব হালকা করা হয়, তবে কিরূপ ধারণা হতে পারে সে ব্যক্তির ব্যাপারে, যার জীবন আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বিষয়ে আনন্দিত ছিল এবং তাওহীদবাদী হয়ে ইন্তেকাল করেছে?
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগে
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়াতে পাঠানোর আগে ১ লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী ও রাসুল মানুষের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন। আর প্রত্যেক নবীর উপরই দ্বীন প্রচারের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল তাদের সময়ে শেষ নবী আগমন করলে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা, দ্বীন প্রচারের কাজে তাঁকে সহযোগিতা করা এবং পৃথিবীবাসীকে শেষ নবীর আগমনের সুসংবাদ দেওয়া। এই মর্মে আল্লাহ পাক সকল নবী রাসুলের কাছ থেকে রুহের জগতে অঙ্গীকারও গ্রহণ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সুরা আলে ইমরানের ৮১ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا اتَيْتُكُمْ مِّنْ كِتبٍ وَّحِكْمَةٍ ثُمَّ خَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ ءَاَقْرَرْتُمْ وَاَخَذْتُمْ عَلي ذلِكُمْ اِصْرِيْ قَالُوا اَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَا مَعَكُمْ مِّنَ الشَّهِدِيْنَ
অর্থাৎ- “(হে প্রিয় নবী! স্মরণ করুন, ঐ সময়ের ঘটনা) আর যখন আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন এই বলে যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হেকমত যা দান করেছি, অতঃপর তোমাদের নিকট তোমাদের প্রাপ্ত এগুলোর সত্যতা প্রতিপাদনকারী কোন রাসুল আগমন করলে তোমরা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে তাঁর দ্বীনের দাওয়াতী কাজে অবশ্যই সহযোগীতা করবে। তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আমার এ কথার উপর ওয়াদা করছ এবং আমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে নিয়েছ? তাঁরা সকলে সমস্বরে বললেন, আমরা অঙ্গিকার করছি। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা নিজেরা সাক্ষী থাকো আর আমি নিজেও তোমাদের সাক্ষী হয়ে রইলাম।”
সেই মোতাবেক সকল নবীই তাঁদের নিজ নিজ জাতীকে নবী পাকের শুভাগমনের বার্তা পৌছে দিয়েছেন। যেমন- নবীজির আগমনের ৪ হাজার বছর পূর্বে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দোয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে নবীজির আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজীদের সুরা বাকারার ১২৯ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
অর্থাৎ- “হে আমাদে প্রতিপালক! আর তুমি তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে রাসুল প্রেরণ কর, যিনি তাদেরকে তোমার আয়াত তিলাওয়াত করে শুনাবেন, কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন আর তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমি মহা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।”
এই দোয়ার মধ্যেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমণের সুসংবাদ রয়েছে।
একই ভাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর জাতীকে নবীজির শুভাগমনের সংবাদ দান করেছিলেন। পবিত্র কোরআনের সুর আস-সাফের ৬ নং আয়াতে সে প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে-
অর্থাৎ- “এবং (স্মরণ করুন) যখন মরিয়মের পুত্র ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! আমি হলাম আল্লাহর রাসুল, আমাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। আমি তাওরাতের সত্যায়নকারী যা আমার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। আর আমি এমন একজন রাসুলেরও সুসংবাদ-দাতা যিনি আগমন করবেন আমার পরে, যার নাম হবে ’আহমদ’।”
হযরত ইরবায বিন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একখানা হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
أَنَا دَعْوَةُ أَبِي اِبْرَاهِيْمَ وَ بَشَارَةُ عِيْسَي
অর্থাৎ- “আমি হলাম পিতা ইবরাহিম (আ:) দোয়া আর ঈসা (আ:) সুসংবাদ।” প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর দরবারে যেই রাসুল প্রেরণের জন্য দোয়া করেছিলেন, আমি হলাম সেই রাসুল। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর পরে যেই নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, আমি হলাম সেই নবী।
আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি আখেরী নবী মুহাম্মদ (সাঃ)
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম সৃষ্টি। যখন আসমান-জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নত্র, পাহাড়-পর্বত, সাতসমুদ্র, জ্বিন-ইনসান, কিছুই ছিল না। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক সৃষ্টি করেন এবং ঘোষণা করেন খাতামুন নাবিয়্যিন তথা শেষ নবী। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন সৃষ্টিকুলের মূল। তিনিই হচ্ছেন সর্বপ্রথম নবী। আবার দুনিয়াতে আগমনের দিক থেকে তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী। এ প্রসঙ্গে আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় মাদারিজুন নবুয়ত কিতাবের ভূমিকায় সূরা হাদিদের আয়াত-
অর্থ, তিনিই আদি, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ, তিনিই গোপন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ।
এর তাফসির করতে গিয়ে বলেন- উক্ত আয়াতে কারীমার শব্দাবলীতে যেমন মহান আল্লাহ তায়ালার হাম্দ ও প্রশংসা রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাত ও সিফাতের বর্ণনাও রয়েছে। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিফত বা গুণ الاول এ জন্য যে আল্লাহপাক সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতএব সৃষ্টির দিক থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম বা আউয়াল। আল্লাহর হাবিব নিজেই এরশাদ করেছেন اول ماخلق الله نورى অর্থাৎ আল্লাহপাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হাবিব নবুয়তের দিক থেকেও প্রথম। যেহেতু তিনি ইরশাদ করেছেন كنت نبيا وان ادم لمنجدل فى طينة অর্থাৎ আমি ঐ সময় নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম মাটির খামীরের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন। আলমে মিসাকে الست بربكم আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? তিনিই প্রথম এই প্রশ্নের উত্তর দেন। এবং তিনিই প্রথম বিশ্বাস করেছিলেন। যেমন ইরশাদ হচ্ছে- وبذالك امرت وانا اول المسلمين- অর্থ এর উপর আমি আদিষ্ট হয়েছি, আর আমি সর্বপ্রথম মুসলিম। (সূরা আনআম ১৬৩)।
মিশকাত শরীফের ৫১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে
عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينة وسأخبر باول امرى دعوة ابراهيم- وبشارة عيسى رؤيا امى التى رأت حين وضعتنى- وقد خرج لها نور اضاء لها منه قصور الشام
অর্থ, হজরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন হজরত আদম (আ.)-এর দেহ বরকতময় মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিল, তখন আল্লাহ আমাকে শেষ নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। এবং শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার প্রথম পরিস্থিতি সম্পর্কে বলব। আমি হচ্ছি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়া, ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুসংবাদ এবং আমার জন্মের সময় তিনি আমাকে যা দেখেছিলেন তার আমার মায়ের চাক্ষুষ দৃষ্টি। তার থেকে এমন এক আলোর উদ্ভব হয়েছিল যার দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদগুলি আলোকিত হয়েছিল। (শরহে সুন্নাহ)
এই হাদীসটি মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসতাদারিক গ্রন্থে ইমাম হাকিম এবং মাউরিদুজ জামান গ্রন্থে ইমাম ইবনে হাব্বান বর্ণনা করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله متى وجبت لك النبوة- قال وادم بين الروح والجسد (رواه ترمذى)
অর্থ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- সাহাবায়ে কেরামদের অনেকে আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নবুয়ত কখন থেকে আবশ্যক হয়েছে? তিনি বললেন যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ এবং শরীরের মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন তখন থেকে আমার নবুয়ত আবশ্যক হয়েছে। (তিরমিজী, কিতাবুল মানাকিব, মুস্তাদরিক লিল হাকিম)
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ ও ইমাম হাকিম 1 টি হাদিস বর্ণনা করেছেন-
عن مسيرة الفجر قال قلت يارسول الله متى كنت نبيا وفى لفظ متى كتبت- قال وادم بين الروح والجسد-
অর্থ:-হযরত মাছিরাতুল ফাজর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কখন নবী হয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ এবং শরীরের মধ্যে মিশ্রি“ত ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম। (মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরিক লিল হাকিম)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকিক (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিস-
عن عبد الله بن شقيق عن رجل قال قلت يا رسول الله متى جعلت نبيا قال وادم بين الروح والجسد (رواه احمد)
অর্থ:- হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকিক রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আপনাকে কখন নবী মনোনীত করা হয়েছে? তিনি জবাবে বললেন- যখন আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীরের মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন। (মুসনাদে আহমদ)
খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বিঃ) বলেন
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ঈদে এ মিলাদুন্নবী ﷺ উপলেক্ষে অন্তত এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হবে।
হযরত ওমর ফারুক (রাদ্বিঃ) বলেন
مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ اَخْيَا الاسْالاَمُ
অর্থ:- যে মিলাদুন্নবী ﷺ কে সম্মান করল সে যেন ইসলামকেই জিন্দা করল
হযরত উসমান গণি জুননূরাঈন (রাদ্বিঃ) বলেন –
مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلَى قرأة مَوْلِدِ النَّبِىُ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ فَكَا نَّمَا ثَهِيد غَزُوَةِ بَدَر رَوحُنَيْنُ
অর্থ:- যে মিলাদুন্নবী ﷺ উপলক্ষে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে যেন বদর এবং হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করল
মাওলা আলী হযরত আলি (রাদ্বিঃ) বলেন-
مَنْ عَظَّمَ مَوْ لِدِ النَّبِى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَكَانَ سَبَبَا لِقرا ته لا يَحْرُمُ مِنَ الدُّنْيَا اِلا َّبِالاِ يْمَانِ وَيَدْخُلُ الجَنَّهَ بِغَيْرِ حِسَاب
অর্থঃ- যে ব্যাক্তি মিলাদুন্নবী ﷺ কে সম্মান করবে তার বদৌলতে সে ঈমান ব্যতিরেকে দুনিয়া হতে বিদায় নেবেনা এবং কোন হিসাব নিকাশ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করবে।
তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী (রাদ্বিঃ) বলেন-
وَدَوتْ لَوْكَانَ لِى مِثل جَبَلٍ اُحٍد زَهْبًا فَا نْفَقُتُهُ عَلَ قِراَ ة مَوْلِدِالنّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
অর্থাঃ- আমার মন চায়, যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমান স্বর্ন থাকত, তাহলে সব গুলো মিলাদুন্নবী ﷺ পালনে খরচ করতাম।
হযরত জুনাঈদ বাগদাদী (রাদ্বিঃ) বলেন-
অর্থাঃ- যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে উপস্থিত হয় এবং তাকে যথাযথভাবে সম্মান করে, তার ঈমান সফল হয়।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) গুরুত্ব