হাযির নাযির বিষয়ে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি (রহ) এর প্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] ৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেন,
النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ ـ
“উম্মতের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, উম্মতের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, আমার উম্মতের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগােনা করা ও বরকত দান করা এবং আমার উম্মতের মধ্যে কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলােই হচ্ছে হুযুর (ﷺ) এর শখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।” ১৯৬
{সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২ : ১৮৪-১৮৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন }
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ) তাফসীরে রুহুল বায়ানে, সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন,
بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْت
ُ শীর্ষক অধ্যায়ের মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন-
وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ، ـ
“আল্লাহ তাআলার ওলীগণ একই সময়ে কয়েক জায়গায় ভ্রমণ করতে পারেন। একই সময়ে আল্লাহ তাআলার ওলীগণ একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন। {মােল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত চতুর্থ খন্ড, পৃ- ১০১ হাদিস নং-১৬৩২}
তাই এক সময়েই বহু জায়গায় মিলাদ মাহফিল হয় আল্লাহ তাআলার ওলীগণ যদি একাধিক শরীরে বহু জায়গায় ভ্রমণ পারেন তাহলে রাসূল (ﷺ) ভ্রমণ পারবেন না কেন? বরংনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সাথে কোন তুলনাই হতে পারে না ?
কাযী আয়ায আল-মালেকী (রহ) উল্লেখ করেন,
قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ـ
“যে গৃহে কেউ না থাকে, সে গৃহে (প্রবেশের সময়) উম্মতের বলা উচিত , হে নবী ﷺ আপনার প্রতি দুরুদ ও সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হােক।”
{ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে মুকুকে মােস্তফা : ২/৪৩ }
মােল্লা আলী ক্বারী (রহ) শরহে শিফা গ্রন্থে উল্লেখ করেন
أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام
“কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের গৃহে গৃহে অবস্থান আছেন।”
{ শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ, }
হাযির নাযিরঃ
আমরা যা কিছুই করি না কেন সবকিছুই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর রওজা মোবারক থেকে দেখেন। ইতােপূর্বে আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর হাদিস বর্ণনা করেছিলাম, সেখানে রয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদের ভালো-মন্দ সকল কাজ দেখতে পান
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে,,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ،.
“আল্লাহ তায়ালা কুল-কায়িনাত আমার সামনে তুলে ধরেছেন। তখন আমি দুনিয়াতে কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সমস্ত কিছু দেখতে পেয়েছি,যেমনি ভাবে আমি আমার নিজ হাত দেখতে পেয়েছি তেমনি ।”
{হুলিয়াতুল আউলিয়া: ৬১০১, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়তী : খাছায়েসুল কোবরা : ২/১৮৫ পৃ., ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কবীর : ১/৩৮২পৃ., মুত্তাকী হিন্দিী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪২০ হাদিসঃ ৩১৯৭১,
মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৯৫ পৃ:, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মালঃ ১১/১৩৭৮ হাদিস : ৩১৮১০, হায়সামী ও মামাউদ যাওয়াহিদ : ৮/২৮৭ পৃ., হাদীসের সনদের ব্যাপারে লা-মাযহাবী ওহাবী খারিজীরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের আপত্তির দাঁতভাঙা জবাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হাদিস শাস্ত্রের উপর গবেষনামূলক গ্রন্থপ্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন” ১ম খন্ডের ৫০৭-৫০৮পৃষ্ঠা দেখুন।}
হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا،.
“মহান আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবী কে আমার সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত স্বচক্ষে দেখেছি
হজরত মুহাম্মদ (স) হাযির নাযির
” ২০২ {মুসলিম আস-সহীহ : ৪/২২১৬ হাদিস ২৮৮৯, আবু দাউল : আস-সুনান কিতাবুল ফিতান : ৪/৯৫ হাদিস ও ৪২৫২, ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/২৮৪ হাদিস : ২২৫০, আবু দাউদ : আস-সুনান : ৪/৯৭ , হাদিস ৪২৫২, তিরমিজি : আস-সুনান ৪ হাদিস ১৮২, নাসায়ী : আস-সুনানে : হদিস ১৬২৭, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১৬/ হাদীস : ৭২৩৬, ইবনে মাজাহঃ আস-সুনান : হাদীস ৩৯৫২, খতিব তিবরিযী : মেশকাতঃ ৪/৩৫৪পৃ. হাদীস ৫৭৫০}