You are currently viewing দুরুদে ইব্রাহিম

দুরুদে ইব্রাহিম

দুরুদে ইব্রাহিম

দুরুদে ইব্রাহিম

দুরুদে ইব্রাহিম বাংলা উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলাআলি মুহাম্মাঁদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।

দুরুদে ইব্রাহিম ফজিলত

এ দরুদ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাক জবান হতে তৈরি। অতএব, এ দরুদ সব দরুদের সেরা দরুদ, যা দরুদে ”ইব্রাহীম” নামে খ্যাত। যে পবিত্র নামের উছিলায় বা বরকতে আল্লাহ্ পাক হযরত আদম এবং হাওয়া আলাইহিওছাল্লাম-এর গুনাহ মাফ করে দোয়া কবুল করেছিলেন; সেই নামের উপর দোয়া ও সালাম ভেজার ফজিলত বা মর্তবা বা সৌভাগ্য যে কত বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া আল্লাহ্পাক এবং তাঁর ফেরেস্তারা যে কাজ করে থাকেন তার চাইতে অতি উত্তম ফজিলত পূর্ণ কাজ কী হতে পারে! সবোর্ত্তম ও ক্ষুদ্রতম দরূদ – সকল উলামায়ে কেরাম এতে একমত যে সবোর্ত্তম দরূদ হল দরূদে ইব্রাহীমী যা নামাযের মধ্যে পড়া হয় ।

আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ কর কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি সাহাবায়ে কেরাম এ দরূদ শিক্ষা দিয়েছেন যে, এভাবে আমার প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ কর। আল্লাহর আরশে মোয়াল্লায় আমাদের প্রিয় নবী রাহমাতালি্লল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের নাজাত চিন্তায় অত্যন্ত ব্যথাতুর হয়ে উঠেন। তা দর্শনে আল্লাহ্ পাক সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ”প্রিয় হাবীব! আপনি এত ব্যথাতুর হচ্ছেন কেন? আপনার উম্মতের যে কোনো দোয়া আমি কবুল করে নেব যদি তারা তার সাথে দরুদ শরীফ বেঁধে দেয়।” (ইবনে মাযাহা শরীফ)। তাই আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করে হুকুম করলেন, ‘ইন্নাল লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউছাল্লুনা আলান নাবীই, ইয়া আইয়ুহাল লাজিনা আমানু ছাল্লু আলাইহি ওয়াসাল্লামু তাছলীমা।”

দুরুদে ইব্রাহিম পাঠের উপকারিতা

(1) রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, ”আমার প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করিলে কোয়ামতের দিন তাহার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজেব হইয়া যায়।

(2) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (মেশকাত শরীফ)

(3) আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, ”যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাহার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন এবং তাহার দশটি গোনাহ মাফ করা হবে, আর তাহার মর্যাদা দশগুণ উচ্চ করা হবে। (নাসায়ী শরীফ)

(4) হজরত আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তি যদি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তাকে দশটি উচ্চ দান করবেন। মর্যাদা, এবং তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে।” আর দশটি গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। (নাসায়ী শরীফ)

(5) হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের নিকট আমার উপর দরুদ পাঠ করবে, আমি তা শুনবো, আর যে ব্যক্তি আমার উপর গায়েবানা (অর্থাৎ দূরে থেকে) দরুদ পাঠ করবে, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হবে। (বায়হাকী)

(6) হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, ”আল্লাহ্ তায়ালার বহু ফেরেশতা যমীনে ভ্রাম্যমাণ রয়েছে, যারা আমার নিকট আমার উম্মতের পক্ষ থেকে তাদের সালাম পৌঁছে দেয়। (নাসায়ী ও দারমী)।

(7) হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরও বর্ণনা করেন, মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”কোনো ব্যক্তি দরুদ শরীফ পড়া মাত্র একজন ভ্রাম্যমাণ ফেরেশতা আমার দরবারে উপনীত হয়ে খবর দেয়, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! অমুকের সন্তান অমুক আপনার উপর এত মোর্তবা দরুদ শরীফ পাঠ করেছেন। অমনি আমি ও তার ওপর ঠিক তত মোর্তবা দরুদ পাঠ করি। অতঃপর সেই ফেরেশতা আল্লাহর দরবারে আরজি পেশ করে- হে মাবুদ! অমুকের সন্তান অমুক আপনার হাবীবের ওপর এত মর্তবা দরুদ পাঠ করেছেন। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ্ পাক তাকে জানিয়ে দেন, ”উত্তম কিরামান ও কাতেবীনকে বলে দাও, তার প্রত্যেক মোর্তবা দরুদ পাঠের পরিবর্তে যেন তার আমলনামা থেকে দশটি করে গোনাহ্ কেটে দেয় এবং আমার তরফ থেকে প্রত্যেক কাটা স্থানে দশটি করে নেকী লিখে রাখে।” (মুয়াত্তা শরীফ)

কৃপণ ব্যক্তি

(8) হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সে কৃপণ, যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হয়, কিন্তু সে আমার নামে দরূদ পাঠ করে না। (তিরমিযী)

(9) হযরত আবু দাররা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ”যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা আমার ওপর দশবার দরুদ পড়বে সে কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে। (তাবারানী)

(10)এক হাদীসে উল্লেখ আছে, একদা রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে বসেছিলেন। এ সময় চারজন প্রধান ফেরেশতা এসে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দেখে প্রশ্ন করলেন, ”হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কী চিন্তা করছেন? রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ”আমার উম্মতের চিন্তা করছি, কীভাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নেওয়া যায়। এই কথা শুনে প্রথম ফেরেশতা আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ”আপনার ওই উম্মত যে সকালে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করবে, আমি মৃত্যুর সময় তার জান সম্মান ও ইজ্জতের সাথে সহজে কবজ করব।

দ্বিতীয় ফেরেশতা ইসরাফিল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনার যে উম্মত সকাল-সন্ধ্যা দশবার করে আপনার উপর দরুদ ও সালাম ভেজবে, আমি তার জন্য হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের নিচে সেজদারত অবস্থায় তার জন্য গুনাহ মাফির জন্য প্রার্থনা করব এবং প্রার্থনা কবুল না হওয়া পর্যন্ত সেজদা থেকে মাথা তুলব না।

তৃতীয় ফেরেশতা মিকাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপনার যে উম্মত প্রাতে দশবার এবং সন্ধ্যায় দশবার আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম জানাবে, আমি হাশরের ময়দানে তাকে নিজ হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করাব।

চতুর্থ ফেরেশতা জিব্রাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহু ধরে বললেন, অনুরূপ দরুদ পাঠকারীকে আমি এভাবে পুলসিরাত পার করে জান্নাতে পৌঁছে দেবো। (মাওয়াহের লুদ্নী)

হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

(11) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং ভালোভাবে বসে আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি দরুদ শরীফ পাঠ করেন। বার।” কেউ যদি আমাকে দশবার দোয়া করেন, আল্লাহতায়ালা তাকে একশত বার দোয়া করেন। কেউ আমার উপর একশত বার দরূদ পাঠ করলে মহান আল্লাহ তার উপর হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করেন এবং তার জন্য জান্নাতকে হালাল ও জাহান্নামকে হারাম করে দেন। (মুসলিম শরীফ)

(12) হযরত ইবনে মাস্উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উপর সর্বাধিক দরুদ পাঠকারী কিয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে। (তিরমিযী)

(13) হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নামে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করি; অতএব দরুদ পাঠের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করব?

হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ”যতটুকু তুমি চাও। আমি বললাম, ”এক চতুর্থাংশ সময়। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ”যতটুকু তুমি চাও; আর যদি আরও বেশি কর, তবে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও’ আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম_ তবে দুই তৃতীয়াংশ সময়। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, আমি আপনার উপর দরুদ পাঠের জন্য আমার সমুদয় সময় নির্দিষ্ট করব। আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তোমার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার সকল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে আর তোমার সমস্ত গোনাহ্ মাফ হবে। (তিরমিযী)

হযরত রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

(14) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সুপারিশের পূর্বে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তবে যারা সর্বদা আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে তারা আমার সুপারিশের পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের আমার কাছ থেকে কোন সুপারিশের প্রয়োজন নেই। (মুসলিম শরীফ)।

পবিত্র কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে দরুদ শরীফ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অনেক প্রকার দরুদ শরীফ আছে, যার প্রত্যেকটির মোর্তবা বা ফজিলত বা সৌভাগ্য ভিন্ন ভিন্ন। ইমাম ইব্নে কাইয়ূ্যম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু-এর মতে, দরুদ শরীফ পাঠে কম-বেশি চলি্লশ প্রকার মোর্তবা বা ফজিলত বা সৌভাগ্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দরুদ শরীফ পাঠে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। সর্বাবিধ বিপদ-আপদ দূরীভূত হয়। দেহ রোগমুক্ত থাকে। স্বাস্থ্য অটুট হয়। হায়াত বৃদ্ধি পায়। যাবতীয় অভাব-অভিযোগ মোচন হয়। ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণসহ দ্বীন-দুনিয়ার সকল মক্বসূদ হাসিল হয়। নিয়মিত বেশি বেশি দরুদ পাঠকারীর হাশরের মাঠে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ প্রাপ্তি ও মুক্তি লাভের আশা করা যায়। দরুদ শরীফ পাঠের সর্বাপেক্ষা স্বাদের ও মধুর বিশেষত্ব এই যে, দরুদ শরীফ পাঠের উছিলায় পাঠক উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। তার সমগ্র জীবনের সকল প্রকার গুনাহ্ মাফ হয়ে যায় এবং স্বপ্নযোগে নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীদার নছিব হয়। অর্থাৎ জিয়ারত বা দর্শন লাভ হয়।

 

Leave a Reply