You are currently viewing আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

মুয়াজ্জিন যখন আজান দিচ্ছেন তখন ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ উচ্চারণ করে, অতঃপর শাহাদাতের বুড়ো আঙুল বা আঙুলে চুম্বন করা মুস্তাহাব এবং এতে দুনিয়া ও দ্বীন উভয়ের কল্যাণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে। এটা সাহাবায়ে কেরামের দ্বারা প্রমাণিত এবং অধিকাংশ মুসলমান একে মুস্তাহাব হিসেবে পালন করেন। ‘প্রসিদ্ধ সালাতে মস্উদী’ কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড نماز শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে- “হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি নামাযের আযানে আমার নাম শুনে তার চোখের উপর তার অঙ্গুষ্ঠ স্থাপন করবে, আমি তাকে কিয়ামতের কাতারে খুঁজব এবং আমি তাকে আমার পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব। তাফসীরে রূহুল বয়ানে ষষ্ঠ পারার সূরা মায়েদার আয়াত وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلوةِ الاية এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে- “মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহর মতে, শাহাদাতের আঙুল দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের নখ চুম্বনের নিয়ম যঈফের রেওয়ায়েতের সাথে একমত। কারণ এ বিধান মারফু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসে কিরাম একমত যে, আকর্ষন ও ভীতি প্রদর্শনের সময় যঈফ হাদীস অনুযায়ী আমল করা জায়েয।)

আযানের প্রথম শাহাদত বলার সময়- صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) বলা মুস্তাহাব এবং দ্বিতীয় শাহাদত বলার সময়- قُرةُ عَيْنِىْ بِكَ يَارَسُوْلَ اللهِ  (কুর্রাতু আইনী বেকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) বলবেন। অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং বলবেন- الَلهُمَّ مَتِّعْنِىْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ (আল্লাহুম্মা মত্তায়েনী বিসসময়ে ওয়াল বসরে) এর ফলে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওকে নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কনযুল ইবাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়াতেও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ‘ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে, আমি ওকে আমার পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং ওকে বেহেশতের কাতারে অন্তর্ভূক্ত করবো। এর পরিপূর্ণ আলোচনা ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকায় বর্ণিত আছে।

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ 

উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- শামী, কনযুল ইবাদ, ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়া, কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকা। ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। مقاصد حسنه فى الاحاديث الدئره على السنة ইমাম সাখাবী (রঃ) শিরোনামের কিতাবে বর্ণনা করেছেন- ইমাম দয়ালমী (রঃ) ‘ফিরদাউস’ গ্রন্থে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। যে মুয়াযযিনের কন্ঠ থেকে যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনা গেল, তখন তিনি (রাঃ) তাই বললেন এবং স্বীয় শাহাদতের আঙ্গুলদ্বয়ের ভিতরের ভাগ চুমু দিলেন এবং চক্ষুদ্বয়ে লাগালেন। তা’দেখে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি আমার এই প্রিয়জনের মত করবে, তাঁর জন্য আমার সুপারিশ অপরিহার্য।”

উক্ত মাকাসেদে হাসনা গ্রন্থে আবুল আব্বাসের (রহঃ) রচিত মুজেযাত গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে- হজরত খিদর (আ.) থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ শুনে বলে-

مَرْحَيًابِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةِ عَيْنِىْ مُحَمَّدِ ابْنِ عَبْدِ اللهِ

(আইন মারহাবা বে হাবিবি ওয়া কুররাতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ) তারপর তার বুড়ো আঙুল চুম্বন করুন এবং তার চোখে রাখুন, তাহলে তার চোখ কখনই ব্যাথা হবে না।) বইটি আরও বর্ণনা করে: করা হয়েছিল। অতঃপর তার চোখে একটি পাথর পড়ল যা তিনি বের করতে পারলেন না এবং তিনি প্রচন্ড কষ্ট পেলেন। মুয়াজ্জিনের কন্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ শুনে তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে তাঁর চোখ থেকে পাথর বেরিয়ে গেল। একই গ্রন্থে মাকাসেদে হাসনা, হযরত শামস মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ মাদানী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি ইমাম আমজাদকে (মিশরের প্রাক্তন উলামাদের একজন) বলতে শুনেছেন: দ্বারা-  وَقَبَّلَهُمَا وَمَسَحَ بِهِمَا عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْ مُدْ اَبَدًا উভয় আঙ্গুলকে চুম্বন করে চোখে লাগাবে, কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না। ইরাক- আযমের কতেক মাশায়েখ বলেছেন যে, যিনি এ আমল করবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্ত হবে না।

وَقَالَ لِىْ كُلّ مِنْهُمَا مُنذُ فَعَلْتُهُ لَمْ تَرْمُدْ عَيْنِىْ

কিতাব রচয়িতা বলেছেন- যখন থেকে আমি এ আমল করেছি আমার চক্ষু পীড়িত হয়নি।

কিছু অগ্রসর হয়ে উক্ত‘মকাসেদে হাসনা’গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে-

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

হযরত ইবনে সালেহ বলেছেন- যখন আমি এ ব্যাপারে জানলাম, তখন এর উপর আমল করলাম। এরপর থেকে আমার চোখে পীড়িত হয়নি। আমি আশা করি, ইনশাআল্লাহ এ আরাম সব সময় থাকবে এবং অন্ধত্ব মুক্ত থাকবো। উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ইমাম হাসন (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ‘ শোনে যদি বলে এবং

مَرْحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِىْ مُحَمَّدِ ابْنِ عَبْدِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে এবং বলবে- لَمْ يَعْمَ وَلَمْ يَرْمَدْ তাহলে কখনও সে অন্ধ হবে না এবং কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না। মোট কথা হলো ‘মাকাসেদে হাসনা’ এই প্রথা অনেক ইমামের দ্বারা শাস্ত্রে প্রমাণিত। শরহে নেকায়াতে বর্ণিত আছে-

জানা দরকার যে মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন; صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ) এবং দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন- قُرَّةُ عَيْنِىْ بِكَ يَارَسُوْلَ اللهِ (কুর্রাতু আইনি বেকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুক্ষদ্বয়ে রাখবেন, ওকে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত আছে। মাওলানা জামাল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী (রহ.) তার ফতোয়া কিতাবে উল্লেখ করেছেন:

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ

আযানে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা করেছেন।

আল্লামা মুহাম্মদ তাহির (রাঃ) تكملة مجمع بخار الانوار  গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে ‘বিশুদ্ধ নয়’ মন্তব্য করে বলেন-

وَرُوِىَ تَجرِبَة ذَالِكَ عَنْ كَثِيْرِيْنَ

 হযরত সদরুল আফাযেল আমার মুর্শিদ ও উস্তাদ আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব কিবলা মুরাদাবাদী বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ইনজিল’ গ্রন্থের একটি অনেক পুরানো কপি পাওয়া গেছে, যেটার নাম ‘ইনজিল বারনাবাস’। ইদানীং এটা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং প্রত্যেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এর  অধিকাংশ বিধানাবলীর সাথে ইসলামের বিধানাবলীর মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক জায়গায় লিখা হয়েছে যে হযরত আদম (আঃ) যখন রূহুল কুদ্দুস (নুরে মুস্তাফা) কে দেখার জন্য আরজু করলেন, তখন সেই নুর তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলের নখে চমকানো হলো। তিনি মহব্বতের জোশে উক্ত নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে লাগালেন। (রূহুল কুদ্দুসের অর্থ নুরে মুস্তফা কেন করা হল; এর ব্যাখ্যা আমার কিতাব ‘শানে হাবিবুর রহমানে’দেখুন। ওখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে ঈসা (আঃ) এর যুগে রূহুল কুদ্দুস নামেই হুযুর (সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশহুর ছিলেন। হানাফী আলিমগণ ছাড়াও শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে একমত। যেমন শাফেঈ মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব – اعانة الطالبين على حل الفاظ فتح الممعين  এর ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-

দ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু

“( নিজের বৃন্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিয়ে চোখে লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।)” মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব-

كفاية الطالب الربانى لرسالة ابن ابى زيد القيردانى

এর প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার পর লিখেছেন-

“( বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেবে এবং চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু পীড়া হবে না।  আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

আল্লামা শেখ আলী সাঈদী عدوى  নামক কিতাবের ১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

যাইহোক, শায়খ আল্লামা মুফাসসির নুরুদ্দিন খুরাসানী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি আজানের সময় কিছু লোককে লক্ষ্য করেছিলেন যখন তারা মুয়াজ্জিনের মুখে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ শুনেছিলেন। তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে চুমু দিলেন এবং নখদ্বয়কে চোখের পলকে এবং চোখের কোণায় লাগালেন এবং কান পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন। পত্যেক শাহাদাতের সময় এ রকম একবার একবার করলেন। আমি ওদের একজনকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন আমি বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম কিন্তু মাঝখানে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যে এক রাতে আমি হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি (স:) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তুমি আজানের সময় তোমার চোখে বুড়ো আঙুল দেওয়া বন্ধ করলে কেন? যদি তুমি চাও, যদি আপনার দৃষ্টিশক্তি আবার ভালো হয়, তাহলে আবার চোখে আঙুল দেওয়া শুরু করুন। ঘুম ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই রোগে আর আক্রান্ত হইনি। উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হলো যে, আযান ইত্যাদিতে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন ও চোখে লাগানো মুস্তাহাব, হযরত আদম (আঃ) সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) ও ইমাম হাসন (রাঃ) এর সুন্নাত। ফকীহ, মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ একমত যে এটা কাম্য। শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের ইমামগণ এটাকে মুস্তাহাব বলে রায় দিয়েছেন। প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করেছে এবং করছে। আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

আমলকারীর চোখ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে

আমলকারীর চোখ রোগ থেকে মুক্ত থাকবে এবং ইনশাআল্লাহ কখনও অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা। সে হুজুর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শাফায়াত প্রাপ্ত হবে এবং তাকে কেয়ামতের কাতার থেকে বের করে তার পিছনে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

একে হারাম বলা মূর্খতার পরিচায়ক। যতক্ষণ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট  দলীল পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ একে নিষেধ করা যাবে না। মুস্তাহাব  প্রমাণের জন্য মুসলমানগণ মুস্তাহাব মনে করাটা যথেষ্ট। কিন্তু হারাম বা মকরূহ প্রমাণের জন্য নির্দিষ্ট দলীলের প্রয়োজন যেমন আমি বিদ্আতের আলোচনা উল্লেখ করেছি।

বিঃ দ্রঃ- আযান সস্পর্কেতো সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত রিওয়ায়েত ও হাদীছ সমূহ মওজুদ আছে, যা ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। তকবীর ও আযানের মত। হাদীছসমূহে তকবীরকে আযান বলা হয়েছে-দু’ আযানের মাঝখানে নামায আছে অর্থাৎ আযান ও তকবীরের মধ্যবর্তী। সুতরাং তকবীরে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ বলার সময়ও বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করা ফলপ্রসূ ও বরকতময়। আযান ও তকবীর ব্যতীতও যদি কেউ হুযূর  (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়, তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং সদুদ্দেশ্যে হলে তাতে ছওয়াব রয়েছে।  বিনা দলীলে কোন কিছু নিষেধ করা যায় না। যেভাবেই হুযূর সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়া সাল্লামের তাযীম করা হবে, ছওয়াব রয়েছে। -সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-

হাদীস নং-১————

‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রা:) বলেন

‘‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রা:) বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী, যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছে। যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। অতঃপর হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে ওহী আসে যে, লোকটিকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে তার জানাজা শেষে দাফন করা হোক। হজরত মুসা (আ.) অনুরোধ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাইল সাক্ষ্য দেয় যে লোকটি 200 বছর ধরে আপনার অবাধ্য ছিল। এরশাদ বলেন, হ্যাঁ, তবে তার একটা ভালো অভ্যাস ছিল। তিনি যখন তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতেন, আমার হাবীব যখনই হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম দেখতেন, তখনই তিনি তা চুম্বন করতেন এবং তাঁর চোখের উপর রেখে তাঁর উপর দুরূদ পাঠ করতেন। এ জন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তাকে সত্তর স্বামীর স্ত্রী দিয়েছি।” দেখুন,,, ক. ইমাম আবু নঈম : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৩/১৪২ পৃ. খ. আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালভী : সিরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা-৮৩ গ. আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩৫৪ পৃষ্ঠা ঘ. জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা :১/৩০,হাদিস : ৬৮, মাকতুত-তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত। ঙ. আল্লামা আবদুর রহমান ছাফূরী : নুযহাতুল মাযালিস : ২/১৪২ পৃ. চ. আল্লামা দিয়ার বকরী : আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২ পৃ.

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করার প্রমাণ

回 হাদীস নং ২————- এ ব্যাপারে হযরত আদম (আ:) এর আমল ঃ বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (রহ,) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন,-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (আ:) জান্নাতে অবস্থানকালে নূরনবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ তা’য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ তা’য়ালা আপন হাবীব ( সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (আ:) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (আ:) এই ঘটনা হুযুর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) কে জানালেন। হুযুর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ দেখুন,,,,, ক. তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ : সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা খ.আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস,২/৭৪পৃ. 回 হাদীস নং-৩——— হযরত খিযির (আ:) কর্তৃক রাসূল (পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল বর্ণিত ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (রহ,) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ موجبات الرحمة و عزائم المغفرة এর মধ্যে হযরত খিযির (আ:) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم )মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা দেখুন,,,, ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হাদিস : ১০২১ খ.  কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হাদিস : ২২৯৬ গ. মওদ্বুআতুল কবীর : ১০৮ পৃ ঘ.  জাআল হক : ২/২৪৬ পৃ

হযরত আবু বকর (রা:) এর আমল এবং সনদ তাত্ত্বিক বিশ্লেষন

হযরত আবু বকর (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতামত আমি তুলে ধরব, যাঁরা হাদিসটি সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। ১. ইমাম সাখাভীর অভিমত ঃ আল্লামা ইমাম সাখাভী (রহ,) হযরত আবু বকর (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لا يصح ‘হাদিসটি সহীহ নয়।’ হাদিসটি সহীহ নয় বললে, “হাসান” হাদিস বুঝায়। এমনকি মোল্লা আলী ক্বারী (রহ,) বলেন, لا يصح لا ينافى الحسن- -‘‘কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্য হাদিসটি সহীহ নয়-তা দ্বারা হাদিসটি “হাসান” হওয়াতে কোন অসুবিধা বা নিষেধ করে না।’’ ইতিপূর্বে আমি ইমাম সাখাভীর বক্তব্যও পেশ করেছি। বুঝা গেল, হাদিসটি কমপক্ষে “হাসান” হাদিস যা দলীল হিসেবে দাড় করানোর গ্রহণযোগ্যতা রাখে। ২.  আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (রহ.)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা বলেন যে- ‘‘আমার কথা হলো হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) পর্যন্ত প্রসারিত (মারফূ হিসেবে প্রমাণিত), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযুর (পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার পর আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’ দেখুন,,, ক. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন, হযরত আবু বকর (রা.) আমল করার কারণে এটাই যথেষ্ট এবং সনদ তাঁর কাছে প্রসারিত। মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ : হাদিস : ১০২১ কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ : হাদিস : ২২৯৬ আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃষ্ঠা : হাদিস : ৪৫৩ মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ. : কিতাবুল আযান ফাওয়াহিদুল মওদ্বুআত : ১/৩৯ পৃ. তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ লাআলীল মাসনূ আ : ১৬৮-১৭০ পৃ

আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

回 দলীল নং ৫———-

আল্লামা তাহের পাটনী ও শাওকানীর অভিমতঃ

আল্লামা তাহের পাটনী ও শাওকানীর অভিমতঃ- আহলে হাদিস মাওলানা কাযী শাওকানী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাওয়াহিদুল মওদ্বুআত ১/১৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (রা:) বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনার পর লিখেন, رواه الديلمى فى مسند الفردوس عن ابى بكر مرفوعا قال ابن طاهر فى التذكرة: لا يصح -এই হাদিসটি ইমাম দায়লামী (রহ.) তার মুসনাদিল ফিরদাউস আস্ মারফু গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (যার সনদ রাসুলুল্লাহ) পর্যন্ত পৌঁছেছে উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা তাহের পাটনী (রহ.) তার “তাযকিরাতুল মওদ্বুআত’’ গ্রন্থে বলেন হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের নয় (তবে হাসান)।’’ আর আল্লামা তাহের পাটনীর মুল বক্তব্যটি হচ্ছে তার তাযকিরাতুল মওদ্বুআত গ্রন্থের : ১/৩৪ পৃষ্ঠায়। হাদিসটি সহীহ নয় বলতে “হাসা” হাদিস বুঝায় যা আমি কিতাবের শুরুতে অসংখ্য মুহাদ্দিসের মতামত দিয়ে আলোচনা করে এসেছি। শুধু তাই নয় আল্লামা তাহের পাটনী আরও বলেন, উক্ত হাদিসটিও কয়েক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাই তার মতে হাদীসটি ‘হাসান’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তা ছাড়া ইমাম সাখাভী মাকাসিদুল হাসানার ৩৯১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটির অনেকগুলো সূত্র ও আমল বর্ণনা করেছেন যেমনটি উল্লেখ করেছেন আল্লামা আযলূনী তার কাশফুল খাফা : ২/১৮৫পৃ.হাদিস : ২২৯৪-এ।

ওহাবী ও আহলে হাদীস কে দাঁতভাঙ্গা জবাবা দেখুনঃ

(১)“ত্বলিবিন আলা হাল্লিল আলফাজি ফাতাহিল মুজিনে, এর ২৪৭ পৃষ্ঠা ।

(২) কিফায়াতুত ত্বলিবের রব্বানী লি রিসালাত ইবনে জায়িদ আলকাইর ওয়ানী, এর ১৬৯ পৃষ্ঠা

হাদীসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হয়, তখন হাদীসটি ‘হাসান’ হয়ে যায়। আঙ্গুলী চুম্বনে  চোখে মাছেখ করা

Leave a Reply