You are currently viewing মা বাবার পায়ে ধরে সালাম করা কি জায়েজ

মা বাবার পায়ে ধরে সালাম করা কি জায়েজ

মা-বাবা বা কোন নেককার বুজুর্গের হাত-পা ও কপালে বরকতের নিয়তে ছুমা দেওয়াকে অধিকাংশ  ফুকাহায়ে কেরাম জায়েয মনে করেন। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পায়ে চুমু দিয়েছেন। বলা যায় যে,নিজ মাতাপিতা বা নেককার বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গের পায়ে চুমু দেওয়া যাবে। তবে প্রচলিত নিয়মানুসারে পায়ে ধরে সালাম করা যাবে না।এটা বিদ’আত ও সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। একবার খাজা সাহেব সে সময়ের বড় বুজুর্গ হযরত ওসমান হারুনী (রহ)-এর সাথে দেখা করতে এলেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে খাজা সাহেবের মনে অনেক ভক্তি তৈরী হলো। তিনি ওসমান হারুনী (রহ)-কে কদমবুচি করলেন। এই সম্পর্কে যারা সন্দিহান, তাঁদেরকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা সৈয়দ মোঃ মিজানুর রহমান সম্পাদিত ‘গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মাঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)’ নামক বইয়ের ১৩৪-নং পৃষ্ঠা পড়ার আহবান থাকলো। কদমবুচি ফার্সি শব্দ | কদম অর্থ পা আর বুচি অর্থ চুম্বন | অর্থাৎ বুযুর্গানে কেরাম , সম্মানী বাক্তিবর্গ ,মা বাবা ,উস্তাদ ও আপন মুর্শিদকে সম্মান ও তাজিমের সহিত পায়ে চুম্বন করাকেই বলে কদমবুচি | তবে সর্বসাধারণের জন্য ইহা প্রযোজ্য নয় | আর মাথা নত হওয়া মানেই সিজদাহ হয়না | সিজদাহর জন্য শর্ত হলো ৮ টি অঙ্গ প্রতঙ্গ মাটিতে লাগাতে হবে | যথা ২ হাতের তালু , ২ হাটু ,২ পায়ের আঙ্গুল , কপাল ও নাক | এর মধ্যে বিনা ওজর ছাড়া একটি বাদ পড়লে সিজদাহ হবেনা | অতএব মাথা নত মানে ই সিজদাহ নয় আর প্রত্যেক কাজের আমল নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর | ( বুখারী শরীফ , নাসাই শরীফ ) | মা বাবার পায়ে ধরে সালাম করা কি জায়েজ

কদমবুচি করা বৈধ কি না?

https://www.youtube.com/watch?v=c9iSIrOgiH8

কদমবুচি ফার্সি শব্দ থেকে এসেসে যার অর্থ কদম বা পা আর বুচি শব্দের অর্থ চুম্বন | বুযুর্গানে কেরাম , সম্মানী বাক্তিবর্গ ,মা বাবা ,উস্তাদ ও আপন মুর্শিদকে সম্মান ও তাজিমের সহিত পায়ে চুম্বন করাকেই বলে কদমবুচি | তবে সর্বজনীন এর জন্য প্রযোজ্য নয় | আর মাথা নত হওয়া মানেই সিজদাহ নয় | সিজদাহর জন্য শর্ত হলো ৭টি অঙ্গ প্রতঙ্গ মাটিতে লাগাতে হবে | উভয় হাতের তালু , উভয় হাটু ,উভয় .পায়ের আঙ্গুল , কপাল ও নাক | এর মধ্যে বিনা ওজরে একটি বাদ পড়লে সিজদাহ হবে না | অতএব মাথা নত মানেই সিজদাহ নয় আর প্রত্যেক কাজের আমল নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর | ( বুখারী শরীফ , নাসাই শরীফ ) |

হাদিসের দৃষ্টিতে কদমবুচি

১নং হাদীস :

মা বাবা

অর্থ: ওয়াযি’ ইবনে আমের (রা বলেন, আমি একদা রাসুল (সা এর দরবারে গিয়ে হাজীর হলাম, আমাকে বলা হল ইনিই হলেন আল্লাহর রাসুল। আমরা তখন তাহার হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুমু খেলাম। (বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৪৪৬, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুছি )

২ নং হাদিস:

মা বাবার

অর্থ: হযরত যাকওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু হযরত ছুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তাঁর চাচা) কে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাত ও পায়ে চুম্বন করতে দেখেছি। ( বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৯৮৮, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুচি । এবং মিশকাত শরিফ )

৩নং হাদিস:

মা বাবার
অর্থ: হজরত জারি রাদিয়াল্লাহু আনহ, যিনি আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদলের অংশ ছিলেন, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনা শরীফে পৌঁছলাম, তখন আমরা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত পায়ে চুম্বন করলাম। (আবূ দাউদ, হাদিস নং ৫২২৪, ৩য় খন্ড, ৪ নং অধ্যায় ) ।মা বাবার পায়ে ধরে সালাম করা কি জায়েজ

৪নং হাদিস:


অর্থ: হযরত শাফওয়ান বিন আসাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই ইহুদীদের একটি গোত্র মহানবী (সা.)-এর হাত ও পায়ে চুম্বন করত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫, ৫ম খন্ড )

কদমবুচির শরয়ী অনুমোদনে ফোক্বাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীনদের গুরুত্বপূর্ণ অভিমত

(১): রদ্দুল মোহতার গ্রন্থকার বলেন

মা বাবার পায়ে ধরে সালাম

আল্লামা আইনী বলেন, দীর্ঘ আলোচনায় হাত চুম্বন, কদমবুছি, মাথা বুছি  ইত্যাদির বৈধতা প্রমাণিত হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দুই চোখের মাঝখানে কপালে চুমু খাওয়ার বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে, তবে এ সকল ক্ষেত্রে চুম্বন জায়েয যখন উদ্দেশ্য হয় সম্মান ও বরকত লাভ করা।

(২): বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’ এর মধ্যে আল্লামা ইবনে হাজর আল আসকালানী (রহ) বলেন

তিনি বলেন, হাদিস শরীফ থেকে হাতবুছি ও কদমবুছির বৈধতা ও অনুমোদন প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু ইমাম মালিক ও ইমাম আবহারী রহমাতুল্লাহি তায়ালা আনহুমা এটাকে মাকরূহ বলেছেন এই শর্তে যে তা যদি অহংকার প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হয়। কিন্তু যদি তা আল্লাহর একজন নেক বান্দার কারণে হয় অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্মান ও মর্যাদার কারণে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা জায়েয ও উত্তম।

(৩) বুখারী শরীফে মুকাদ্দামায় আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী (রাহ) বর্ণনা করেন

একবার হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর সাথে দেখা করতে আসেন এবং ইমাম বুখারীকে উভয় চোখের মাঝে চুম্বন করেন। অতঃপর তিনি ইমাম বুখারীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে শিক্ষক! সম্মানিত ও পবিত্র সত্ত্বা যিনি মুহাদ্দিসদের সম্রাটের হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কারণ অনুসন্ধানে চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করেন, দয়া করে আমাকে আপনার পায়ে চুম্বন করে ধন্য হওয়ার অনুমতি দিন।
(মুকাদ্দামাতু সহিহীল বুখারী)।

(৪). ভারত উপমহাদেশের অন্যতম মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দিসে দেহলভীর অভিমতঃ

কদমবুছি অনুমোদিত হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, (আল্লাহর সন্তুষ্টিতে) বুর্জগানে ধার্মিক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের পায়ে চুমু খাওয়ার বৈধতা এ হাদিস দ্বারা দিবালোকের মতো প্রমাণিত হয়।

কদমবুচির বৈধতায় দেওবন্দীদের অভিমত

১) মৌলভী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী

দেওবন্দী মৌলভী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তার “ফাতুয়ায়ে রশিদীয়া” গ্রন্থে তার প্রশ্নোত্তরে বলেছেন- প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তির সম্মানার্থে দাঁড়ানো বা তার উপর পা রাখা কি জায়েয? উত্তরঃ কোন ধার্মিক ব্যক্তির সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে তাদের পায়ে চুম্বন করা জায়েয এবং হাদীসে নবী (সাঃ) থেকে এটা প্রমাণিত।

ফতুয়ায়ে রশিদিয়া

২) দেওবন্দী মুফতি শফির অভিমত

তিনি বলেন, হযরত শায়খ মুহাম্মাদ আবেদ সিন্দী বলেন, যারা আলেম, ধর্মীয়ভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাবান তাদেরই হাত-পা চুম্বন করা জায়েয।
— জাওয়াহারুল ফিকহ: ১ম খন্ড, পৃ: ১৮৫
 
৩) এমদাদুল ফতোয়া কিতাবের ভাষ্য মতে

কদমবুচি মূলত জায়েজ প্রথা। তবে নির্দেশনা বিবেচনায় নিষেধ করেন।
— জাওয়াহারুল ফিকহ, খণ্ড ৫, পৃ: ৪৫

৪) এমদাদুল আহকাম গ্রন্থে আছে-

আলেমগণ, পিতা-মাতার হাত-পা চুম্বন করা জায়েয, কিন্তু রুকুর উদ্দেশ্যে মাকে সেজদা করা হারাম।
— এমদাদুল আহকাম: খণ্ড, ১ম পৃ: ৩৫ পৃষ্ঠা।

৫) ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া গ্রন্থে আছে

যে ব্যক্তি সম্মানের তার কদমবুচি করা বৈধ। তবে ভ্রান্ত বিশ্বাস এবং সেজদার মত হবেনা।
— ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: খন্ড-১ পৃষ্ঠা: ১৭৫

৬) মৌলভী আশরাফ আলী থানভীর অভিমত

তিনি ‘আওকাসুফ’ কিতাবের একটি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, এই হাদিসের মূল কথা হলো, প্রায় সব পীরের সাহাবীই তাদের পীরের হাত, পা ও কপালে চুম্বন করেন। তাই কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে শরী‘আতের কোন পরিবর্তন যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

Leave a Reply